ভেবেছিলাম আজকে তোকে সাজাব নতুন করে 
পাইনি আমি রঙের খোঁজ 
দু'হাতে মোর কালির বোঝ 
বিবর্ণতার প্রীতি-উপহার 
দুর্বিসহ ধার-চারিধার 
ধূসরিত কান্নাঢাকা আজকে দোলের ভোরে... 
Sunday, 16 March 2014
অব্যক্ত
Saturday, 15 March 2014
দোল থেকে দোলে
রং খেলবি রঞ্জন?
হরেক রকমের রং,লাল-হলুদ-সবুজ---
নীলটাও নেব,
তোর আঁকার খাতাটা আজকে সাজিয়ে দেব। 
আগেরবার তুই শুনলি না 
কোন কথাই মানলি না 
গাঁদা আর জবা পিষে 
রঙে রং ছিল মিশে 
সেই গত ফাগুয়ার দিনে 
যখন তুই ভালবাসার ঋণে 
আকাশ হিঙ্গুলে মাখা 
আমার একমুঠো আবির শুধু তোর জন্যে তুলে রাখা 
তুই দেখেও দেখলি না 
ছিঁটেফোটাও মাখলি না 
ধূলায় রঙের বাসর 
আবির হয়েছে ধূসর 
রঞ্জনের রাঙাবে মন 
তাদের সাধ্য কি আর এমন!
তোর যে লাগেনি কিছুই ভালো 
আমার ক্যানভাস তাই কালো 
নবীনের সূচনায় 
সবুজ স্বপ্ন হারায় 
বেদনায় হল নীল 
অন্যরকম হোলি,বিজাতীয় রঙ সামিল 
পড়ে থাকা সেদিনের কাজ 
চূড়ান্ত জোৎস্না মেখে 
ঠিক যেমনটা তোর ভাল লাগে 
সম্পূর্ণ করিস আজ 
জানি সুগন্ধী আমার আবির 
বিবর্ণ আজ হয়েছে স্হবির 
নয় সে পুলকিত 
পুষ্পরেণুর মত 
তবু যদি পাঠাই আজকে রাতে 
আমাদের চেনা চাঁদের হাতে 
তরল রূপোর আলোয় 
তুই কি আঁকবি মন্দভালোয়? 
ছবিটা হবে এমন, 
তুই রং মেখেছিস যেমন
আমার রঙের রাগে রাঙিয়ে নিজের মন
একটিবার, 
শুধু  একটিবার 
দোল খেলবি রঞ্জন?
Tuesday, 11 March 2014
বৃত্তে
জানি আমি হারিয়ে গেছি 
অনেকদিন আগেই 
ঘূর্ণির বৃত্তটা সেই যেই কে সেই 
তফাতটা এটুকুই কখনও চোরাবালি 
ভরেছিলাম হাতের মুঠোয় 
কখন আবার খালি 
এই ত সেদিন শিশুবেলা
মায়ের নরম আঁচল 
গরম ভাত স্কুলের আগে
কপালে ফোঁটা কাজল 
গ্রীষ্ম দুপুর ঘুঘুর ডাক
শরৎ শিউলিকুঁড়ি 
শাওনমাসে উঠোননদে 
ডিঙি নাও সারি 
পৌষে রাতে মেলায় সওদা 
রঙিন আলোর বহর 
গোঁজামিলের অংকে ভরা 
শীতের দ্বিপ্রহর 
হারিয়ে গেছে সোনার দিন 
বহুদিনের আগে 
আজও তবু আসে গ্রীষ্ম 
শুধু নিঃস্ব লাগে
ফিরে ফিরে আসে ঋতু 
ধীরে চলে যায় 
বাস্প ঝরে টিনের চালে 
স্মৃতির চিলেকোঠায়  
Saturday, 8 March 2014
প্রহসন
সবস্হানে সকলমনে বিষের বসবাস 
বিশ্বাসের সঙ্গে লোভ চরম সহবাস 
মানুষ যদি হয় সে নারী তার আরোই জ্বালা 
ঘরে বাইরে বিপন্ন তার মাটিতে পা ফেলা 
নারীবাদী বুলিতে উড়ছে রঙীন ফানুস 
নিজের মুখ করছে আড়াল মাংসলোভী মানুষ 
নারী আবার মানুষ নাকি নিছক মেয়েছেলে 
যুগে যুগে মানুষরাই পিষছে পায়ে ফেলে 
লোকদেখানো বাড়াবাড়ি বিশ্বনারীদিবস 
বুদ্ধির গোড়া পচনধরা বিবেকটাও বিবশ 
নেতা-উজির লেখক-কবি দামী মুখোশখানা 
দিনের মঞ্চে নারীকে মা রাতে রাতকানা 
বাপ-বন্ধু-স্বামী-পুত্র সঙ্গী সহোদর 
স্বার্থটুকু খোঁজার বেলায় অঢেল সমাদর
ট্রামে বাসে রাজ্যপাটে সংরক্ষণ ভারী 
পথে ঘাটে কাকে চিলে করছে কাড়াকাড়ি 
সংরক্ষণের ঘেরাটোপে লুপ্ত প্রায় প্রাণী 
কুসুমের গর্ভে কলি মরছে সবাই জানি 
সর্বস্হানে সর্বস্হরে বিঁধছে তাকে সমাজ 
নিংড়ে নিয়ে ছিবড়ে ফেলা এই সমাজের কাজ 
রামরাবণ সহোদর বন্দী আজো সীতা 
তন্ত্রবাজির জাঁতাকলে নিত্য ধর্ষিতা 
লুটে নিয়ে শরীর মন আর কি সমাজ চাস 
বাঁচার রসদ তোর কি শুধুই নারীর নির্যাস!!???? 
........................................................... 
'বিশ্বনারীদিবস' সত্যিই, শব্দটা শুনলেও হাসি পায়। নাকি ঘৃণা বোধ হয়? কে জানে! আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি, যে নারীর জন্যে বাছাই করা দিন বা সংরক্ষিত কোন আসন সে যে স্তরেই হোক না কেন, সে বড়ই লজ্জার, নারীদের জন্য নয়, নারীর মধ্যে তীব্রভাবে বেঁচে থাকা মানুষ নামক সত্বাটির জন্য। 
'নারী' এই শব্দটি কি মানুষের নারী পুরুষ  এই  দুইটি সত্বার মধ্যে একটিকে চিহ্নিত করার জন্যেই শুধু ব্যবহৃত হতে পারে না আজও, যখন কিনা আমরা চরম আধুনিক, প্রগতিশীল, তথাকথিত উন্নত সমাজ ও জীবনধারায় অভ্যস্ত বলেই নিজেদেরকে দাবী করছি? নারীকে কেবল নারী না ভেবে মানুষ ভাবতে পারার মত শিক্ষিত কি আমরা কি আদৌ কখনও হতে পারব? দূর থেকে যদি একটি পুরুষকে আসতে দেখি আমরা অনায়াসে বলে দিই যে, একজন মানুষ আসছে। কিন্তু, একজন নারীকে দেখলে সহজেই বলা হয় একটি মেয়ে আসছে, আর এখানে, ঠিক এখানেই তফাতটা! 
নারীদের জন্যই বিশেষ দিবস পালনের কি মানে? সম্মান প্রদর্শন? তাহলে পুরুষদের জন্যে বিশ্বপুরুষ দিবস কেন পালন করা হয় না? তারা কি সম্মানের যোগ্য নয়? নারীদের জন্যই কেন সংরক্ষণ? তাদের অধিকার পাইয়ে দেবার জন্যে? তা, নারীদের অধিকার দেওয়া বা না দেওয়ার, এবং তার পরিধি নির্ধারণ করার অধিকারটাই বা কার বা কাদের আছে শুনি ? নারীর জন্যে সংরক্ষণ বা নারীর উদ্দেশ্যে বিশেষ দিবস পালন করার মধ্যে কি নিহিত আছে, তার স্বাধীনতার প্রকাশ,  না চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া যে, 
"দেখ নারী তুমি কেমন লাটাই 
সুতো রেখে নিজের মুঠোয়, ইচ্ছেমত হাঁটাই.....!" 
নারী পুরুষ সৃষ্টিলগ্ন থেকেই আলাদা। ছিল আছে থাকবে। দুর্বলতা ও সক্ষমতা উভয়েরই নিজ নিজ ক্ষেত্রে আছে এবং থাকবে। শুধুমাত্র শারীরিকভাবে অপেক্ষাকৃত কিছুটা কম শক্তিশালী হবার মত একটি নিতান্ত ফালতু কারণে মধ্যযুগীয় বর্বরতা তাকে সয়ে যেতে হবে আর কতকাল? তথাকথিত 'মানুষ' রা আর কত নিযুতকোটিবার ভুলবে যে, মানুষজাতটার দুইটি প্রজাতির মধ্যে শারীরিকভাবে একটু কম শক্তিধর প্রজাতিটির উপরই কিন্তু বিধাতাপুরুষ সৃষ্টিজগতের সর্বাপেক্ষা কঠিন কাজটির দায়িত্ব দিয়েছেন? সেখানেও কি পক্ষপাতিত্ব এই ভেবে যে, শক্তিধর পুরুষের পক্ষে সৃষ্টিকে ধারণ, বহন,এবং জননের তীব্র যন্ত্রণা সহ্য করা সম্ভব হতো না বলে? তাই হবে, আসলে বিধাতাও 'পুরুষ' কিনা! আর বিধাতা যে পুরুষই হবেন সে বিধানটাও যে কার তৈরী তার অব্যর্থ প্রমান যে ঠিক কোন ঠিকানায় পাব সেটাই বা, কে জানে!
তো, এইগুলো না জানা কথা, বারবার বলতেও ঘেন্না হয়! তবে, না বলেও থাকা দায়। আবার ফিরে আসি নারীদিবস পালনের মেকি উচ্ছ্বাসের প্রসঙ্গে। এই দিবস কেবল নারীদের জন্যেই কেন? পুরুষদের ক্ষেত্রে কেন নয়? আমার ব্যক্তিগত মতামত এটাই, এই দিবস পালন শুধু এটাই প্রমাণ করে যে, নারী হল লুপ্তপ্রায় পশু-পাখিদের মত মাইনরিটি,যার অস্তিত্ব, অধিকার বা সম্মান পুরুষ নামক মানুষ মেজরিটির দয়া ও নিয়ন্ত্রণ নির্ভর। আর মানে তো একটাই সমাজ ও বিশ্বের চোখে নারী শুধুই নারী হয়েই রয়ে গেল, মানুষ আর হলো না। আর তাই, একজন মানুষ হিসাবে আমি তীব্র বিরোধ করছি এই নারীদিবস পালন বা সংরক্ষণ নামক চরম অপমানজনক প্রহসনের। নারী মানুষ। তার সম্পূর্ণ ক্ষমতা আছে নিজের যোগ্যতায় নিজের চেষ্টায় নিজের স্হান অর্জন করার। সংরক্ষণের ভিক্ষাদান করে তার মনুষ্য সত্বার খোলামকুচি করা বন্ধ হোক! আর আবহমনকাল ধরে বয়ে চলা এঁদো পাঁকের ঘূর্ণির মধ্যে নিমজ্জিত থেকে বছরে একদিন নারীদিবস পালন করা স্রেফ ভাঁওতা, আর এই সস্তা আড়ম্বড়ে যে নারীরা বড় উৎসাহিত বোধ করেন তাঁদেরকেও বলি, দিদিরা, চোখ খুলুন! কোনটা সম্মান কোনটা অপমান একটুও ভেবে দেখবেন যদি আয়না, ফ্রীজ, টিভি, আর পরনিন্দা পরচর্চার পর হাতে সময় থাকে। আর নারীর নিজের যদি নিজেকে মানুষ ভাবার গরজ না থাকে তাহলে তার শুধু নারীদেহ হয়ে মুখ থুবড়ে পরে থাকাটাই অবিসম্ভাবী, এ নিয়তি খন্ডানো বিধির বাড়া।
তাই, সর্বাত্মকরণে এটাই কামনা করি, নারী-পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক হয়ে পরিপূর্ণতা দিক নিজেদের মানুষ হওয়াকে। মেকি আড়ম্বড়ে নয়, অহংকার বা অবহেলায় নয়, নারী পুরুষের বিভেদে নয়, মানুষের প্রথম পরিচয় হোক মানুষ হওয়াতে। মানুষের পরিচয় হোক মননে, শিক্ষায়। ঊরুসন্ধির ভাঁজে নয়, মানুষ খুঁজুক, চিনুক নিজেদেরকে মস্তিষ্কের উর্বরতায়, হৃদয়ের বিশালতায়। 
PHOTO: RABINDRANATH TAGORE ART COLLECTION
 
  
 
  
 