Sunday, 29 November 2020

#জীবনেরহ‍্যাসট‍্যাগ

অপরিচিতরা একদিন হঠাৎ দেখা হয়ে 
খুব বেশী পরিচিত হয়ে যাবার পর 
আবার একদিন 
স্বল্প পরিচিতের চেয়েও কম হয়ে যায়। #বাস্তব

এখন বলতে কেন ভাবতেও বাধো বাধো লাগে
হারিয়ে যাওয়া সেই নতূন শীতের ছবিটারই
খোঁজ পড়েছিল সেদিন হন‍্যে হ'য়ে
হারিয়ে যাওয়ার পরে  #মন
 
মানুষ নিজে বদলায় ঠিকানা ও বদলে যায়
সেই নতূন শীতরঙা ক‍্যনভাস তখনও শীতঘুমে
স্মৃতির চিলেকোঠায়  #মায়া

জীবনযুদ্ধে ক্লান্ত সৈনিকের হঠাৎই চোখ লেগে যায়
কোন এক ঝিমধরা মধ‍্যদুপুরে
দৃষ্টি থমকায় চিলেকোঠার কোনে 
সেই শীত ছবি সেই শীত ছবি!!!  #স্বপ্ন

একি! রং নেই, ফিকে কেন 
একদার ঘাসের শীষে হীরের শিশিরওয়ালা 
শীতভোর-সূর্য‍্যের 
কুসুমরঙা ক‍্যনভাস?  #সুপ্তক্ষত

চটক ভেঙ্গে চোখ খুলতেই 
মগজটা অসভ‍্যের মত  
ফিসফিসিয়ে হিসহিসিয়ে ওঠে,
কানের খুব কাছে 
"রং টা বড্ড কাঁচা ছিল যে!"  #উপলব্ধি


Friday, 6 November 2020

আবার দেখা হলে

কোনদিন যদি দেখা হয়
 জিজ্ঞেস করোনা ভাল আছি কিনা

 এই ভদ্রতা আমার ভালো লাগেনি কোনদিন আমি নিতেও জানিনা 

ভালো থাকাটা নষ্ট করে দিয়ে 
সময় নিজের ডানা নেয় গুটিয়ে 

সে সময় আর যাই হোক
 কুশল জানতে চাইতে পারে না

 অনেক রঙ আর অনেকখানি আলো কে  কালো দিয়ে ঢেকে রেখে 
তাদের পথ হঠাৎ করে অন্য দিকে যায় বেঁকে

মুখে হাসি নিয়ে সব ঠিক থাকার ভান
আমাকে দিয়ে হয়নি কোনদিন 

সময়ের কারসাজি সাজানো বাসী
জীবনের উপর কত ঋণ

তাই ভদ্রতা নেই আর
আমি এখন একান্তই আমার 

তার চে যদি অহংকারে না বাধে 
বসলে বোসো 

একটু দূরত্ব রেখে 

কথা বলতেই পার পুরনো চেনা দেখে 

যদি জানতে চাও কি করছি আজকাল 

ভুলেও বলে ফেলব না জেনো
আজও সেখানেই আছি 
যেখানে রেখে গেছিলে কাল 

তোমার বা আমার গাড়িটা ঠিক তখনই হয়তো আসবে 
অনেকখানি ব্যস্ততার মধ্যে একফোঁটা স্মৃতি একতরফা ভাসবে 

তুমি নয় আমি দ্রুত গাড়িটা ধরে নেব
রোমন্থনের আগেই আবার আলাদা হয়ে যাব 

কেউ কারো দিকে ফিরে তাকাবো না আর 

সবুজ ক্ষেত পিছনে ছুটছে জানলার কাঁচে
আমি জানি তারা এখন আবছা হবে মাঝে মাঝে  
...

Tuesday, 19 May 2020

১৯শে মে এবং বর্তমান বরাক উপত‍্যকা | দুয়েক কথা

 পশ্চিমবঙ্গে বরাকের বাংলা ভাষা আন্দোলন নিয়ে দু কথা লেখা খুঁজে পাওয়া বেশ শ্রমসাধ‍্য। একুশে ফেব্রুয়ারির সামনে ত বরাকের রক্ত ফিকে পড়ে যায়! কত দেখলাম।

অবশ‍্য, বরাকবাসীরা নিজেরাই এর ব‍্যতিক্রম কিসে?
শুধু রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার বেলা বিশেষ উদ্দেশ্যে হিন্দি ভাষার বিরোধ করার বেলা এদের এই দিনটিকে মনে পড়ে। আর সেই একই দুষ্ট উদ্দেশ্যে এই বরাকেই লাচিত দিবস পালন করতে অসুবিধা হয় না, "জয় 'আই' অসম' স্লোগান দিতে লজ্জা করে না সেই  অসমীয়াদেরকেই তুষ্ট করতে, যারা আমাদের বাংলা মায়ের টুঁটি টিপে ধরেছিল, পিষে মেরে ফেলেছিল বাংলা মায়ের সন্তানদের তাদের মুখ থেকে মা ডাক মুছে ফেলার জন্যে, কন্ঠরোধ করে দেবার জন্যে ১৯৬১ সালেই নয় শুধু, এর অনেক আগের থেকেই এই ভাষাবিভেদ ও আঞ্চলিকতার বিষবৃক্ষের শিকড় ছড়িয়ে পড়েছিল শুধু বরাক উপত‍্যকাতেই নয়, সমগ্র আসামে। গোয়ালপাড়া সহ আরও বিভিন্ন হিন্দু বাঙালি অধ‍্যুষিত অঞ্চল থেকে হিন্দু বাঙালিদের  অত‍্যাচার, হত্যা, বসতবাটীতে অগ্নিসংযোগ করার মাধ্যমে বলপূর্বক বিতাড়ন করা হয়, তাও রীতিমতো সরকারি নির্দেশে!


আর এই অসমীয়াদের সুখতলাই চাটছে বরাকের বর্তমান বুদ্ধিজীবী বাঙালিরা। অসমীয়া ভাষা পাঠ‍্যক্রমে বাধ্যতামূলক হলে তখন আর তাদের "উনিশে মে" মনে পড়ে না। শুধুমাত্র হিন্দির প্রসঙ্গ এলেই তাদের গায়ে ধুম জ্বর আসে। তবে, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার আসাম চুক্তির অনুচ্ছেদ ৬ কে বলবৎ করার যে ইঙ্গিত দিচ্ছে তাতে, ১৯৬১ সালের পরিস্থিতি প্রত‍্যাবর্তনের সমূহ সম্ভাবনা। বরং বর্তমানে পরিস্থিতি হবে আরও ভয়াবহ। কারণ, আসামের 'বঙালী খেদাও' এর নায়করা মূলতঃ হিন্দু বাঙালি খেদাও এর নায়ক, এবং সেটা আসামের যে কোন রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে।
সম্প্রতি এক উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ব‍্যক্তিত্বের মুখের কথা শুনেছিলাম যাঁর বক্তব্য ছিল নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন CAA প্রসঙ্গে এইরূপ, যে আসামে ৪০০০০০০ বিশেষ সম্প্রদায় (যাদের মূল অংশই অবৈধ অনুপ্রবেশকারী) তাদেরকে সহ‍্য করতে রাজী কিন্তু, মাত্র ৫০০০০০ হিন্দু শরণার্থীদের নয়। ভোটের রাজনীতি কত ঘৃণ্য! পরে যদিও তিনি সুর পাল্টান, তবে সুর আর দল বদলেও ভিতরের উদ্দেশ্য কিন্তু বদলায় না। আর আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ১৯৬১ সালের ভাষা আন্দোলন এর সাথে বর্তমান CAA, ৬ নং অনুচ্ছেদ, ও বরাকের নীচমনা বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের নপুংসকতা ও চক্রান্ত কিন্তু ভীষণভাবে পরস্পর সম্পর্কিত। কারণ, আসাম তথা বরাকে বাংলাবিরোধী যে বিষধোঁয়া আবার কুন্ডলি খুলে ফণা তুলতে চাইছে, তাতে আসামীদের সঙ্গে এবার হাত মেলাবে বরাকের সেই  বাঙালিরা যারা, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে আইন আনলে, সরকারকে মুসলিম বিরোধী বলে মিথ্যা প্রচারণা ও বিশ্বাস করে। যারা রত্নগর্ভা ভারত ও বাংলা মায়ের কোন মহান  যোগ্য সন্তানের জীবনী জীবনেও পড়েনা বা পড়লেও অনুপ্রাণিত হয় না। পাকিস্তানের কোন নামকরা ব‍্যক্তি তাদের কাছে আদর্শ। 


উনিশে মে র কোন মূল্য  নেই  তাদের কাছে, কারণ, তাদের বাঙালি মা বাবার কাছেই বাংলার মূল্য নেই। যে দেশে জন্মায়, বাঁচে, যে ভাষায় মুখের প্রথম বুলি ফোটে, সেই দেশ হোক বা ভাষার সম্মান কেন আদরটুকুও নেই। এরা হিংসা ও আক্রোশে এত অন্ধ। ভারতমাতার বুকের রক্ত খেয়ে পরিপুষ্ট আর বাংলা মায়ের নরম কোলো নিশ্চিতে শুয়ে পাকিস্তানের প্রতি গভীর টান আর আরবের প্রতি উন্মাদ আকর্ষণ বোধ করে।

এরা তাই বাঙালী  হয়েও বাংলাকে কেন ভালবাসবে? এরা বাঙালী হয়েও বাংলা নাম রাখেনা সন্তানদের। দেশ-ভাষা-মা ডাক এর আগে এদের কাছে স্হান পায় ধর্মান্ধতা। আরবি মিশ্রিত ভাষাই এদের সত্যিকারের মাতৃভাষা।

এরা রবীন্দ্রনাথ, সুকান্ত জানে বোঝে না। নজরুলের নামটুকুও নেয় শুধুমাত্র ধর্মের আবেশে। তারা আসল নজরুলকে জানার চেষ্টাও করেনা। 


আর বরাকের বাংলা আন্দোলন ও ভাষাশহীদের কি সম্মান করবে আর ভালবাসবে, তাদের মর্ম বুঝবে আর সন্তানের বোঝাবে?
তারা আরব চেনে এত শিক্ষিত কিন্তু, ১৯ শে মে বোঝে না, এত মর্মান্তিকভাবে নিঃস্ব, হৃদয় ও মস্তিষ্কে। 
তাদের সন্তানরা সরকারের বিরোধী কথা বলতে জানে দেশদ্রোহীদের সমর্থনে গলা ফাটিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে অশ্লীল অভদ্র ভাষায় গালি দিয়ে নিজেকে রাজনীতিবিদ ভেবে অহংকারের ঘোরে পাগল হয়ে মরে, কিন্তু, এক পঙ্ক্তি বাংলা শুদ্ধ করে লিখতে পারে না। লেখা ত দূরস্ত, উচ্চারণটুকু অব্দি আসেনা, সিলেটিতে অব্দি আসে না, আবার মাঝে মাঝে অন‍্যের অনুকরন করে শুদ্ধ বাংলা লিখতে গিয়ে যা লেখে তা পড়তেও লজ্জা বোধ হয় বাঙালি হিসাবে। পারে যে না তার উপলব্ধি বা লজ্জাটুকুও নেই।

কিন্তু, আরবি, হিন্দি, অসমীয়াটা বেশ আসে, অন্ততঃ মাতৃভাষা বাংলার থেকে তো ভালই আসে। আর ইংরেজিতে তো অক্সফোর্ড।

তাই উনিশে মে নিয়ে এরা শিক্ষা ও চেতনাশূণ‍্য। বরাকের ভাষা শহীদরা তাদের বিচারে বাঙালির আগে হিন্দু।

তারাই তো, বরাকের বাংলা উপর আঘাত হানতে অসমীয়াদের হাত শক্ত করবে! ধর্মান্ধতার স্বার্থে এরা যদি দেশদ্রোহী বিরোধী আইনের বিরোধীতা করতে পারে, আতঙ্কবাদ সমর্থক রাজনৈতিক দল ও দলনেতাদের আদর্শ মানতে পারে, তাহলে মাতৃভাষা আর 'মা' ডাক কে ও বেচতে পারে। বিবেকহীন মানুষ অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। থাকবেই।
আর এদের সমর্থক আবার বরাকেরই বাঙালী কবি সাহিত‍্যিকরা!
হেসে বাঁচিনে!

বলার উদ্দেশ্য একটাই যে, এখনো যদি আমরা বরাকের বাঙালিরা নিজেদের ধর্ম, রাজনৈতিক স্বার্থ ভুলে শুধুমাত্র বাঙালি হিসাবে ঐক্যবদ্ধ না হতে পারি, তাহলে মিথ্যে হয়ে যাবে বরাকের বাংলা ভাষাশহীদদের রক্তক্ষয়ী আত্মবলিদান।

আজ যদি আমরা নিজেদের নিকৃষ্ট স্বার্থ বাংলা ভাষার শত্রুদের সঙ্গে হাত মিলাই সেই দিন দূর নয় যেদিন CAA এর জন্যে নয়, ভাষা ও আঞ্চলিকতার বিদ্বেষের জন‍্যে বরাক উপত‍্যকার সমগ্র বাঙালি গোষ্ঠীর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে উঠবে, ধর্ম ও রাজনৈতিক পক্ষাপক্ষ নির্বিশেষে। কারণ, মাতৃভাষা একটি জাতির 
অস্তিত্বের প্রথম সোপান।

সবশেষে একটা কথাই বলব, যে আমি আমার জন্মদায়িনী মায়ের কাছে সীমাতীত কৃতজ্ঞ যে, মা আমাকে বাংলা কে ভালবাসতে শিখিয়েছিলেন, ১৯শে মে এর দুপুরে বরাকের বীর ভাষাশহীদদের সম্মানে এগারোবার যে কামান দাগা হয়, সেটা শুনতে শিখিয়েছিলেন। মাতৃভাষা বাংলার জন্যে কিছু করতে না পারলেও প্রতি বছর এই বিশেষ দিনে সেটাই শোনোর জন‍্যে কান পেতে রই আজো। আর শোনামাত্র বুকের ভিতর কিছু একটা গুমরে মরে আজো। 

যদিও এবার শুনলাম না। দুপুর গড়িয়ে গেল।

উনিশে মে র বরাকের বাংলা ভাষা শহীদদের প্রণাম জানাই। 🙏



Wednesday, 26 February 2020

দেখা হবে




অনেকেই এসেছে তুই আসার আগে
কেউ গেছে কেউ যেতে গিয়ে রয়ে গেছে
তুই আসার থাকার বা যাবার পরে..

হেমন্ত শেষের রুখু পরিত্যক্ত বুনো প্রান্তরে
জানিনা আর কোন পদচিহ্ন পড়বে কিনা
হলেও বা আলাদা করে যাবে না চেনা

এই গথবাধা চেনাগোনার বাইরে
কিছু গল্প অল্প বোনা হয় জানিস?
অসম্পূর্ণ অসম্ভবের কিছু গল্প
তাদের আলাদা রং আলাদা গন্ধ
আলাদা সুরও বলতে পারিস্

বোনার আগেই রেশমী সূতোয়
টান পড়ে যায় প্রতিবার
নকশাও ফোটানো হয় না আর
তবু যতটুকুই হলো মিথ্যা
নয় একেবারে জলো
মরূভূমিতেও ত গাছ জন্মায় বল?
কাটাগাছই, তাই সই।

প্রাণের সৃষ্টিই ত
প্রতীক ভালোবাসার

যেমন তোরটা।

তুই কোনদিন জানতেও পারবি না
জানলে তোর বুদ্ধির তুলির এক তীব্র টানে
বদলে যাবে আমার একান্ত রং এর
হেমন্তের মোড়টা।

তার চে এই ভাল।
জরার জীর্ণ ঝরাপাতা রা
ঝলসে যাক
কোন এক বিশাখা নক্ষত্রে
নকশারা শুয়ে থাকুক শীতঘুমে
তোদের সাথে
আবার দেখা
আমার দেখা
হবে অন্য কোন সঠিক মরশুমে।।

Saturday, 22 February 2020

মা

মা

মা মানে ষষ্ঠীতে দূর্বা আটি
সবুজ হলুদ জামা
শিউলী ফুলে সপ্তমীতে
কপালে আদর নামা
মা মানে শীতের ভোরে
নোয়ার প্রথম পাঠ
হাত ধরে পার হওয়া
হিমাদ্রীদের মাঠ
মা মানে বাসাবাড়ি
পাকা বাশের ঘাট
ঠাকুরঘর রং করে
ক্ষয়ে যাওয়া হাত

মা মানে জন্মদিনে
পায়েস লুচি খুশীর ঘনঘটা
পরীক্ষায় দোরে ঘট
কপালে দইয়ের ফোটা

মা মানেই পড়াশুনা
না হলেই মুখ ভারী
অঙ্ক জ্যামিতি মানচিত্র
অত কি আর পারি?

মা মানে ঝড়ের রাতে
আগলে রাখা বুকে
নবমী দশমী পয়লা বৈশাখ
ঘুরছি মোরা সুখে

মায়ের হাতে আলতা পরা
সপ্তমীর সকাল
একসময়ের চেনা গল্প
আজকে বড় আকাল

মা মানে পুলি পিঠে
পাতানো দইয়ের বাটি
মনসা চাট আর মশলা পান
পৌষমেলায় কেনাকাটি

মা মানে বিরামহীন
অক্লান্ত পরিশ্রম
পুজোর সময় পাচটা জামা
তা ও যেন কম

মা মানে মাখানো ভাত
স্কুলে যাবার বেলা
হাতে গড়া মাটির পুতুল হাড়ি
উনুন খুন্তি সরা

স্কুলের শেষে ছুট্টে এসে
উকি মেরে দেখা
রান্নাঘরে বাইয়া চেলার
ছেচকী ঢেকে রাখা

মা মানে মিহি কাটা
লঙ্কা কাচা আম
বোকার মত খেটে যাওয়া
পায়ে মাথার ঘাম

মা মানে মানিয়ে নেওয়া
অভিশপ্ত সন্তান
উল্কার মাথায় রেখে যাওয়া
আশীর্বাদী ধান

মা মানে জীর্ণ দেহ
ক্ষয়ীষ্ণু ক্ষীণ প্রাণ
ঝড় ঝঞ্ঝা আঘাত সয়ে
আজকে ম্রিয়মাণ

মা তবুও অফুরান
ফুরিয়ে যাবার পরে
বিধাতার যা অসাধ্য
তা ও বন্দী মায়ের করে।।

                                              মহুয়া

Friday, 7 February 2020

ভ্যালেন্টাইন মাস

ইংরেজি বলার দম্ভে
বাংলা গিয়েছি ভুলে

মাতৃভাষাপ্রেম আজ
ধর্মান্ধতার কবলে

শিকড়ের চারপাশে 
পাশ্চাত্য নাগপাশ

আধুনিকতার আজ 
সমার্থক সর্বনাশ 

নির্লজ্জ বসন্ত নিজেকে 
সাজায় ফুলে ফুলে

নির্লজ্জ ভারত-বাঙালি 
ইতিহাস শিকেয় তুলে

বলছে ভ্যালেন্টাইনের মাস

রক্তিম পলাশ লুকোয়  বাহান্ন পুলওয়ামা লাশ!

Friday, 31 January 2020

নাগরিকত্ব সংশোধন আইন CAA এবং ভারতবর্ষ ও আসাম: কিছু অপেশাদারী কথা

পর্ব-১
(CAA ও দেশ)

নাটক, প্রহসন, প্রতারণা, উগ্র সাম্প্রদায়িক এবং আঞ্চলিক বিদ্বেষ আর হিংসা, সর্বোপরি ভোট বাক্সের রাজনীতি যাদের প্রতিবাদের হাতিয়ার সেই বৌদ্ধিক দেউলিয়াদের প্রতি ঘৃণা নয় করুণা বোধ হয়।

একটা কথা কিছুতেই বোঝা যাচ্ছে না যে, বিপন্ন কাউকে আশ্রয় দেবার মানেই কি স্থায়ী বাসিন্দাকে উৎখাত করা ? জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আমরা যারা নিশ্চিত জানি যে আমরা সত্যিকার অর্থেই ভারতবর্ষের বৈধ নাগরিক তাদের মাথাব্যথার কারণটা কোথায় ?

তবে একটা কথা সত্যি যে, ভারতবর্ষের জনসাধারণের সহজ মন আর মাথাকে প্রভাবিত বা বিভ্রান্ত করতে রাজনীতির জুড়ি মেলা ভার আর তার সঙ্গে জাত ধর্ম আঞ্চলিকতার ধুনো থাকলে তো জনদরদী জননেতাগণের কেল্লা ফতে! কারণ, তারা খুব ভালোভাবেই অবগত যে, তাদের মুখে বলা একটা কথাই তাদের অনুগামীদের ভড়কে দিতে যথেষ্ট । কিন্তু, তাই বলে সত্যিই কি আমরা নিজেদের নূন্যতম কান্ডজ্ঞান আর বিচারবুদ্ধিকেও জলাঞ্জলি দিয়ে দেব?

দেশভক্তি আর 'আমার দেশ' মার্কা সংলাপের মেকী দেখনদারির বাইরে বেরিয়ে বাস্তবিকতাটাকে বোঝার দায় বা না বুঝতে চাওয়ার কুপরিণাম কিন্তু আমাদেরকেই ভোগ করতে হবে বা হয়।

সম্প্রতি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে দে়শে 'প্রতিবাদের' যে উন্মত্ত প্রদর্শন শুরু হয়েছে, তার নেপথ্যের কারণটা কি আমরা আদৌ সঠিকভাবে জানি? উক্ত বিলটিকে সংবিধান বিরোধী এবং দেশের সংখ্যালঘু অর্থাৎ কিনা মুসলিম সম্প্রদায়(যদিও ভারতবর্ষে মুসলিমরা কখনোই সংখ্যালঘু নন বরং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যা)বিরোধী বলে সাধারণ মানুষকে পরিকল্পনামাফিক উস্কে দেবার কারণ বহুবিধ ও তার ভিত্তিও রাজ্যভেদে আলাদা।
  আমরা সেই জটিলতার বিশ্লেষণে না গিয়ে বরং সুস্থ সহজভাবে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করি।

CAB(Citizenship Amendment Bill) 2019 যা বর্তমানে CAA(Citizen Amandment Act) হিসাবে  বলবৎ হয়ে গেছে  তাতে কোথাও এমন কোন clause বা শর্তের  উল্লেখ নেই যা থেকে মনে করে নেওয়া যেতে পারে যে, বিলটি সংবিধান বিরোধী বা ভারতের মুসলিম জনসাধারণের  নাগরিক অধিকার ধ্বংসকারী। খুব বেশী বিস্তারিত তথ্য আলোচনা না করে সহজ সত্যগুলো বুঝতে  পারলে হয়তো এই অন্ধ সংশয় ও নিরাপত্তাহীনতার  যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পারি কিছুটা হলেও।

(১) যে অপ্রিয় সত্যিটাকে আমরা স্বাধীনতার সময় থেকে জেনেও না জানার না বলার ভান করে এসেছি সেটাকে মেনে নিয়ে তার নিরিখে ও দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিচার করলে দে়খতে পারি হিন্দুস্থানের হিন্দুরা নিজেদের স্বার্থে কোনদিনই তৎপর হয়নি, এমনকি ভারতবর্ষের স্বাধীনতাটাই এসেছিল জিন্নার 'Two Nations Theory' র উপর ভিত্তি করে, যেখানে ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল অখন্ড ভারতকেই খুবলে নিয়ে পাকিস্তানকে পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র তৈরী করে। পাকিস্তানের তথাকথিত 'কায়দে আজম' মহম্মদ আলি জিন্নার আবদার রাখতে। অবশ্য মোতী গাজীর সুপুত্র জনাব নেহরুরও বাদশা হবার খোয়াইশ ছিল বৈকি। অগত্যা স্নেহান্ধ বাপু দু়ই ছেলেকেই খুশী করতে গি়য়ে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে কোটী কোটী ভারতীয়দের মা কেই দুটুকরো করে নিতে দুই ছেলেকে  সম্মতি দিলেন। বলা যায় সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ নামক ক্যানসারে বৃক্ষের চারা রোপণ হল যার বিষ ফল আর বিষ বাতাসের জ্বালায় বিগত ৭৩ বৎসর ধরে ভারতীয়দের প্রাণ ওষ্ঠাগত।
কিন্তু, সেদিন জিন্না খুবই স্পষ্টভাবেই পাকিস্তানকে আলাদা মুসলিম রাষ্ট্র হিসাবে দাবী করে দাবীটা আদায়ও করে নিয়েছিলেন। কিন্তু, হিন্দুস্থানকে হিন্দুরাষ্ট্র দাবী বা ঘোষণা করার কথা কেউ দাবী করেন নি সাওয়ারকার ছাড়া। কিন্তু, তখন নেহরুর বা জাতির জনক(!) কারোরই সেই দাবীকে বোঝার ইচ্ছে  ছিল না । "মুসলমানের আহার যা হিন্দুর রান্নাঘরে তৈরী হবে তা খ্রিস্টানদের টেবিলে বসে খাব" এই মানসিকতা রাখা হিন্দু নামধারী 'আওলাদ এ গাজী' জহরলাল নেহরুর মতন উচ্চকোটী সেকুলারের হিন্দুরাষ্ট্রের ধারণা কেন যে পছন্দের ছিল না, সে তো সহজেই অনুমেয়। কিন্তু, বাপু যিনি কিনা জাতির পিতা তিনি কিকরে তাঁর হিন্দু সন্তানদের বেলা সেদিন অন্ধ সেজে রইলেন?
সত্যিই সেকুলার হলে কি এমন অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র হওয়া সম্ভব ছিল?
সত্যিকারের পিতা কি করে ছেলেদের হাঁড়ি করতে সম্মতি দিতে পারে?
যদি সেদিন সত্যিই এই অসাম্যের কু উদ্দেশ্যের খেলাটা না হতো, সেকুলারিজম নয় বরঞ্চ তীব্র সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চালটা না চালা হতো, তাহলে আজকের এই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন CAA সত্যিই দরকার পড়ত?

(২) বর্তমানে দেশের সকল সরকার বিরোধী দলগুলি এবং "আমার কোন রং নেই" বলা তথাকথিত বুদ্ধিজীবীর দল নিজেদের স্বার্থে ইচ্ছাকৃতভাবে দায়িত্ব নিয়ে সাধারণ দেশবাসীকে বিভ্রান্ত ও অস্থির করে তুলছেন এই বলে এই নতূন আইন মুসলিম বিরোধী,  অসংবিধানিক এবং এই  CAA আইন প্রণয়ন মোদী সরকারের ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করার ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ।
হাস্যকর হাতিয়ার। সত্যিই বড় কৌতুককর CAA এর সাপেক্ষে এই ব্যখ্যাগুলো।

প্রথমেই যেটা আমাদের বোঝার সেটা হল, ভারতবর্ষ তো বস্তুতঃই হিন্দুরাষ্ট্র। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্থান, ব্রহ্মদেশ মানে মায়ান্মারসহ  সমগ্র আর্য্যাবর্তই ছিল ভারতবর্ষ। হিন্দু কোন ধর্মের নয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ও প্রাচীনতম সভ্যতার নাম।
এবং সিন্ধু নদীর তীরে এই সভ্যতা গড়ে ওঠার কারণে  সিন্ধু সভ্যতার ধারক বাহক বলে ভারতবর্ষের অপর নাম হিন্দুস্থান! সেভাবে দেখলে ভৌগোলিক বিচারে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আমরা সকল ভারতই হিন্দু । তাই নতুন করে ভারতবর্ষকে নিজেকে হিন্দুরাষ্ট্র হিসাবে পরিচয় দেবার দরকারই পড়ে না।

(৩) এবার আসি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা CAA কেন অসংবিধানিক নয় তার উত্তরে।
স্বাধীনতার সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সেইসব দেশ ও ভারতের জনসংখ্যার অনুপাতের উল্লেখ করাটা এখানে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে ।
ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হওয়া দুই ধর্মের মানুষেরই সর্বাঙ্গীণ যে অভূতপূর্ব ক্ষতি সেই সময়ে দেশের   মহান আত্মারা করেছিলেন সেটাই তো শেষ কথা নয়, বরং সেটাই ছিল শেষের শুরু।
শুরু হলো অখন্ড হিন্দুস্থান থেকেই জন্ম নেওয়া ইসলামিক রাষ্ট্রগুলিতে বসবাসকারী হিন্দু জনগোষ্ঠীর উপর নৃশংস অত্যাচার ও হত্যালীলা যা আজ পর্যন্ত ক্রমবর্ধমান।
ভারত থেকেেই বিচ্ছিন্ন হওয়া সাম্প্রদায়িক দেশগুলোর কোনটা নিজেকে ইসলামিক বলে আবার কোনটা নিজেকে গণতান্ত্রিক নামক আলখাল্লা়য় নিজেদের স্বরূপ ঢেকে রাখার ব্যর্থ প্রয়াস করে।
কিন্তু, সেই সবকটা দেশের এজেন্ডা একটাই, হিন্দু নির্মূলিকর়ণ, হয় ধর্মান্তরিত করে না হয় নির্যাতন করে তাড়িয়ে না হয় হত্যা করে।
দেশ ভাগের সময় পাকিস্তানে বসবাসকারী হিন্দু নাগরিককের সংখ্যা ছিল ১২.৯ শতাংশ, যা বর্তমানে এসে দাঁড়িয়েছে ১.৬ শতাংশে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২২.৫ শতাংশ(শুধু সরকারী ১৯৫১ সালের পরিসংখ্যান মতে) যা বর্তমানে ১শতাংশ। কিন্তু, ভারতবর্ষে দেশভাগের সময়ে মুসলিম জনসংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ৭(৩৪ মিলিয়ন) শতাংশ যা বর্তমানে বেড়ে ১৭(২০১মিলিয়ন)শতাংশ, তা ও শুধু সরকারি হিসাবে। তবু হিন্দুস্থানই অসহিষ্ণু, Intolerant!
যাইহোক, স্বাধীনতার সময় থেকে প্রতিবেশী দেশগুলিতে এই যে হিন্দু জনগোষ্ঠীর মানুষ যারা ক্রমাগত অত্যাচারিত হতে হতে প্রাণের তাগিদে বিভিন্ন সময়ে ভারতে আশ্রয় নিতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তাদেরকে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া ভারত সরকারের একান্ত কর্তব্য । মানবিকতার দায় ও বটে, যা পূরণ করতে পূর্ববর্তী সরকারগুলো বিফল হয়েছিল সদিচ্ছার অভাবে। এই অসহায় নাম গোত্রহীন হয়ে ভারতে বেঁচে থাকা শরণার্থীদের এবং অারো অন্যান্য ধর্মের মানুষরা বৌদ্ধ, জৈন , শিখ আদি যারা ভারতে বাইরে থেকে পাসপোর্টে এসে এখানেই রয়ে গেছেন ফিরে যান নি অথচ তাদেরকে কিছু সহজ পন্থায় ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়াই এই আইন বলবৎ করার উদ্দেশ্য। এই আইন কারো নাগরিকত্ব কেড়ে নেবার নয় বরং নাগরিকত্ব প্রদান করার আইন, যার মাধ্যমে ভারতে আসা শরণার্থীদের মোট সংখ্যার একটা সরকারী হিসেব পাওয়া যাবে। এর সাথে দেশের মুসলিম নাগরিকদের উপর কোন আঁচ আসার বা হিন্দু নাগরিকদের বিশেষ লাভ হবার তিলমাত্র জায়গা নেই। এটাই সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বিশ্লেষণ করে বোঝাবার চেষ্টা করছেন। আর যে কোন সুস্থ শিক্ষিত মানুষের পক্ষে এটা বোঝা জলবৎ তরলম।

কিন্তু, না! অত সহজে তো ভারতবাসীকে এটা বুঝতে দেওয়া যাবে না। দিলে যে ভোট বাক্সে টান পড়ছে। কারণ হলো, নাগরিকত্ব সংশোধন আইন CAA এর ভারতবর্ষে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের প্রবেশ পথটা রূদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু, তাতে ভারতের বৈধ নাগরিকদের অসুবিধাটা কোথায়? আমি যখন ভারতের একজন বৈধ দেশভক্ত ও সচেতন মুসলিম নাগরিক তখন কি শুধু সমধর্মী হবার কারণে ভারতে চোরাপথে প্রবেশ করে, দশকের পর দশক ধরে আমারই মাতৃভূমির অন্ন সম্পদ সুবিধা ভোগ করে আমারই মাতৃভূমির বুকে ছোরা বসানো অপরাধীদের কোন ভাবেই সমর্থন করতে পারি?
আজ আমরা দেশের সত্যিকারের বৈধ নাগরিকরা যে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, বেকারত্বসহ আরও নানাবিধ জলন্ত সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছি তার পিছনের কারণগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে, আমদের জাতীয় সম্পদে উড়ে এসে জুড়ে বসা এই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের থাবা।
শুধু তাই নয়, অনেকেরই ধারণা যে, পার্শ্ববর্তী পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা অহিন্দু  অনুপ্রবেশকারীরা সবাই নাকি নিজেদের অভাব মিটাতে ভারতে আমাদের দেশে এসে থাকেন। যদি তাই সত্যি হয়, তাহলেও ভারতেই কেন? সেই ব্যক্তির ভারতে অবৈধ কর্মসংস্থান হওয়া মানে আমাদের দেশের একজন বৈধ নাগরিকের সে হিন্দু অহিন্দু যে ই হোক তার নায্য অধিকারে থাবা বসানো। সেই অনুপ্রবেশকারী বিদেশি ব্যক্তিরা যদি মুসলিম হোন, তাহলে তিনি পৃথিবীর যে কোন মুসলিম দেশে যান ভাগ্য ফেরাতে। তা না করে 'কাফের' এর দেশ ভারতেই কেন? ভারত পাকিস্তান ম্যাচ হলে, যে ভারতের সাহায্যে একদিন পাক খানসেনার হাত থেকে মুক্তি পেয়ে ভারত দ্বারাই স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি মিলল, সেই ভারতেরই পরাজয় কামনা করা হয়, পাকিস্তানের সমর্থনে, তাহলে ভাগ্য ফেরানোর বেলায় ভারত কেন ফেভারিট, পাকিস্তান নয় কেন? বা স্বপ্নের সৌদি আরব নয় কেন? পৃথিবীতে ৫০ টির উপর মুসলিম রাষ্ট্র আছে, বিকল্পের তো অভাব নেই ।

আমাদের অনেক প্রিয় দেশবাসীরা তো এটাও জানেন না যে আমদের অতি প্রিয় 'নিরীহ' বাংলাদেশে কতগুলো এবং কি ধরণের জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব আছে, তাদের সঙ্গে ভারতের কোথায় গোপন সংযোগ, কেমন তাদের নেটওয়ার্ক, আর ভারতের রাজনীতির সাথেই বা তাদের কেমন আঁতাত, আর এইসব অপরাধীদের রাস্তা কুসুমিত করছে সীমান্তের ছেঁড়া কাঁটাতারের বেড়া!

আমি একজন ইমানদার ভারতীয় মুসলিম হিসাবে কি চাইব না, এই কাঁটাতারের বেড়া চিরতরে বন্ধ হোক?
নাকি যারা প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে বিতাড়িত হয়ে ভারতে অবৈধ প্রবেশ করে আত্মরক্ষার পরেও ভারতেরই হিন্দুদের হত্যা করছে ভারতেরই অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মদতে, তাদের সমর্থক হব, তাদেরকে ভারত সরকার দমন করতে গেলে তাদের পক্ষ নিয়ে সরকারের বিরোধীতা করব, সরকারকেই উল্টে হত্যাকারী বলে দেশে 'বিক্ষোভ' নামক দেশদ্রোহীতা চালাব, কেঁদে কেটে সাদাকে কালো বানিয়ে ফেসবুকে কালাদিবস পালন করার পোস্ট দেব?

নিশ্চয়ই না, তাই না?

অপরদিকে, যে সব হিন্দু শরণার্থী বিভিন্ন সময় শুধু হিন্দু হবার অপরাধে আমাদের প্রতিবেশী ইসলামিক দেশেগুলি থেকে অত্যাচারিত বিতাড়িত হয়ে আমাদের দেশে প্রাণের তাগিদে এসেছেন, তারা ভারতবর্ষে যদি স্থান না পান তাহলে তারা কোথায় যাবেন? পৃথিবীর সব এমনকি ভারতীয় মুসলিমদের কাছেও স্বর্গ হলো আরব। আর তাঁদের বর্তমান প্রজন্মের অনেকেরই অজানা যে, তাঁদের জন্নত আরব একদিন ভারতেরই অংশ ছিল, এবং সেখানকার মানুষরা ছিলেন সনাতনধর্মী। এটা কোন কল্পকাহিনী নয়, পৃথিবীর বুক থেকে ইসলামিক আগ্রাসনের ফলে হিন্দুদের ক্ষয়ে যাবার, সংখ্যায় কমে যাবার, নিজ ভিটে জমি থেকে বিতাড়িত হবার যন্ত্রণাময় ইতিহাস, যার ধারা আজো অব্যাহত।
তাই, বর্তমান ভারতবর্ষই পৃথিবীর নির্যাতিত, জোর করে নিজের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হওয়া হিন্দুদের একমাত্র এবং শেষ আশ্রয়। তাঁদের ত আর ৫২ টি বিকল্প দেশ নেই, আশ্রয় নেবার মতন। পৃথিবীতে হিন্দু দেশ যে মাত্র একটাই, বর্তমানের ভারত।

এই শরণার্থী হিন্দুদের যাতে কুকুর বিড়ালের মত নয়, মানুষের মত বাঁচার অধিকার পান, তাঁদের জন্যে ও আগেই বলেছি বৌদ্ধ ,জৈন আদি যারা পাসপোর্টে ভারতে এসে ফিরেও যান নি অথচ নাগরিকের  পরিচয় ছাড়াই এদেশে আছেন তাঁদের ভারতের নাগরিক অধিকার দেবার জন্যে এই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন।
এতে ভারতের বৈধ মুসলিম নাগরিকদের ক্ষতি হবে এই ভুল কথাটা সাধারণ মানুষদের বুঝিয়ে নিজেদের স্বার্থে, আর যারা এই ভুলটাকেই ঠিক ধরে নিয়ে দেশ মাথায় করছেন, সত্যিই তাদের বিচার বুদ্ধির দৌড় দেখে করুণা হয়।

ভারতের মুসলিমরা যদি পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশী সুখী হয়ে থাকেন, তাহলে এটাও ঠিক পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের   মুসলিম নাগরিকরা অনেক বেশী উদার, সচেতন এবং দেশপ্রেমিক। তাঁদের কাছে উন্মাদ ধর্মান্ধতা থেকে দেশ অনেক বড়। তাই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের মাধ্যমে যদি নিজের দেশে এই সর্বনাশা অবৈধ  অনুপ্রবেশ রোধ করতে সহায়ক হয়, তাঁদের ত এই আইনের বিরোধ নয়, বরং ১০০% সমর্থন দেওয়া উচিত এবং অনেক প্রকৃত শিক্ষিত মস্তিষ্কের মুসলিমরা সমর্থন দিচ্ছেন ও।

কিন্তু, দূর্ভাগ্য যে, বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সত্যিটা জেনেও  নিজেদের কদর্য স্বার্থে এই দেশ হিতকর আইনের বিরোধীতা করে আন্দোলনের নামে সরাসরি দেশদ্রোহীতার চক্রান্ত চালাচ্ছেন।
আসলে তারা ঠিক কি চাইছেন?

অসহায় হিন্দু শরণার্থীদের ভারতের নাগরিকত্ব না দেওয়া? নিজ দেশের সাম্প্রদায়িক হিংসার শিকার এই নিরপরাধ হিন্দুরা তাহলে নিপাত যাক? তাদেরকে নাগরিকত্ব দিলে ভারতীয় মুসলমান নাগরিকদের কোথায় কিভাবে ক্ষতি? না কি সরকারী খাতায় পত্রে কিছু অসহায় হিন্দুর নাম উঠে যাবে, সেই জ্বালায় জ্বলছেন তারা?

তাদেরকে মনের দ্বিতীয় গোপন ইচ্ছেটা কি? অসহায় সহায় সম্বলহীন হিন্দুদের সাথে বা তাদের বদলে অহিন্দু অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের যারা ভারতে ঢুকে হিন্দুদের হত্যা করে, ভারতের বুকে ক্যনসারের মত ছড়িয়ে পড়ছে তাদেরকেই  ভারতের নাগরিকত্ব দিয়ে দেওয়া আর সীমান্ত খুলে আহ্বান জানানো?

শরণার্থী আর অনুপ্রবেশকারীদের ভারতে আসার কারণ ও উদ্দ্যেশ কি এক?

এই আইনের ফলে ভারত হিন্দুরাষ্ট্র ঘোষিত হতে চলেছে বলে দেশে তাঁরা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটাতে বদ্ধপরিকর। তাহলে কি আসলে হিন্দুরাষ্ট্রের ভয় নয়, বরং ভারতকে মুসলিমরাষ্ট্রের পরিণত করার "গজবা এ হিন্দ" স্বপ্নটা অপুরণ হবার আশঙ্কা!??

কেউ বলছে হিন্দুদের থেকে আজাদী চাই। যারা বলছে তারা নিজেরা ই সবচেয়ে ভাল জানে একজন মুসলমান ভারতে যতটুকু আজাদ ততটুকু পৃথিবীর আর কোথাও নয়, কোন মুসলিম দেশেও নয়। হিম্মত কোন মুসলিম দেশে দাড়িয়ে কোন হিন্দু এইভাবে আজাদীর স্লোগান দিক্! কোতলে আম হয়ে যাবে। নীরব থেকেই হচ্ছে। আজাদী চাও, বেশ তো, আজাদ হয়ে চলে যাও পঞ্চাশটি মুসলিম দেশের যে কোন একটায়। তা নয়, 'আজাদী' চাই এদেশে থেকেই!কিভাবে? হিন্দুদের দেশেই "Fuck Hindutwa" বলে না 'গজওয়া এ হিন্দ' করে? আর তারই সরব নীরব সমর্থক প্রদীপের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু সেলিম, আরিফ, কামাল বা পূজার বেস্ট ফ্রেন্ড আয়েশা, শামিমা, আনোয়ারা রা!!?? হায়রে বন্ধুরা সারাজীবনের দেওয়া ভালবাসা তোমাদের হৃদয়ে তাহলে কোনদিনও রেখাপাত করতে পারেনি? ভারত তোমাদের কি দেয়নি! সমান অধিকার সম সুখ সম সম্মান, তবুও ভারতের পবিত্র মাটিতে জন্মেও নিজেকে সর্বাগ্রে ভারতীয় নয় মুসলমান ভাবছো?

আর যে সাধারণ মুসলিম জনগণ এই সংগঠন বা রাজনৈতিক উষ্কানীতে পো ধরেছেন তারা কি একবারও এই নগ্ন সত্যিগুলোকে বোঝার চেষ্টা করবেন না নাকি ইচ্ছেকৃতভাবেই না বোঝার ভান করছেন? তারাও কি হিন্দু শরণার্থীরা ভারতেও ঠাই না   পেয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক আর ভারতে অহিন্দু অবৈধ অনুপ্রবেশ বজায় থাকুক? আর তাহলেই বুঝি ভারতীয় মুসলমানদের নাগরিকত্ব সুরক্ষিত হবে?
আশ্চর্য অন্ধ অশিক্ষিত চিন্তাধারা!

ভারতের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মুসলমান নাগরিকরাও কি তাহলে ভারতকে মুসলিম রাষ্ট্র হিসাবেই দেখতে চাইছেন? সত্যি কথা সদাই অপ্রিয়। কিন্ত, এসবই একেবারে তলিয়ে বোঝার, বিবেচনার এবং মানবিকতার বিষয়।

আর তারা যদি তা না চান, তাহলে কিসের ভিত্তিতে তারা CAA এর বিরোধ করছেন?
এটি হিন্দু-মুসলিমের বিষয়ই নয়, যার সাথে সেটাকে কিনা "আজাদী(!)" পর্যন্ত টেনে নেওয়া হচ্ছে! নোংরা রাজনীতি আর মূর্খামির একটা সীমা থাকে!

আমি যখন একজন হিন্দু নেতা বা নেত্রী, তখন কেন CAA এর বিরোধীতা করছি? আমি সেকুলার বলে? নাকি যেখানে আমার ভোটার সংখ্যাই 60 হাজার সেখানে নব্বই হাজার ভোটের জাদুটা এবার থেকে আর চলবে না বলে? ভোটের দিন "না জানে কাহা সে আতে হ্যাঁয়, না জানে কাহাকো যাতে হ্যাঁয়, এই ভুইফোড় ভোটার।

ক্রমশঃ